কর্মসূচীর ব্যাখা - প্রথম দফা কর্মসূচী

হুযুর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাল্যকালেই ‘হিলফুল ফুজুল’ নামক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করে আদর্শ স্থাপন করে গেছেন। যেকোনো আদর্শ প্রতিষ্টায়, এবং মিথ্যার প্রতিরোধে সংঘবদ্ধ বা সংগঠনের মাধ্যমে এগিয়ে যেতে হবে। বিচ্ছিন্নভাবে বা একার পক্ষে তা সম্ভব নয়; আজ সে আদর্শ সত্যে প্রমাণিত হয়েছে। আজ গোটা বিশ্বব্যাপী দিনের পর দিন বিশ্ব মানবতার সম্পর্কের মাধ্যম হয়ে উঠেছে সংগঠন। জাতিসংঘ, ও.আই.সি., সার্ক, এ জাতীয় আন্তর্জাতিক সংগঠন গুলো বিভিন্ন জাতি, সংস্কৃতি ও রাষ্ট্রের মানুষকে একত্রে থাকার সুযোগ করে দিয়েছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আত্মনিয়নাধীকার প্রতিষ্ঠায় গডে উঠেছে P.L.O, L.T.T.E, J.K.L.F, সহ আরো অনেক সংগঠন। বাংলাদেশেও বিভিন্ন ভ্রান্ত মতবাদসহ নানা আদর্শ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সহস্র সংগঠন-সংস্থা রয়েছে এবং হতে থাকবে। তাই আদর্শ প্রচার ও প্রতিষ্ঠার অত্যাধুনিক মাধ্যম হলো সংগঠন। সংগঠন ছাড়া এতবড় মহান ও সার্বজনীন স্বার্থ সংরক্ষণ সম্ভব নয়। ১৯১৭ সালের রুশ বিপ্লব থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত পৃথিবীর উত্থান-পতন, ভাঙ্গা-গড়ার ইতিহাসের সাথে সংগঠন জড়িত। এমনকি ১৯৪৭সালে পাক-ভারত স্বাধীনতা, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ, এবং ১৯৯০ এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনসহ এদেশের সমস্ত ঐতিহাসিক পট-পরির্বতনের পেছনে সাংগঠনিক শক্তি সক্রিয় ছিল। এ থেকে আমার সিদ্ধান্তে পৌছতে পারি- একটি সু-শৃংখল সাংগঠনিক কাঠামো ও প্রতিষ্ঠান ছাড়া সুন্নী মতাদর্শ প্রতিষ্ঠা আদৌ সম্ভব নয়।

এ কারণেই আল্লাহপাক সকল বিচ্ছিন্নতা পরিহার করে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার নির্দেশ দিয়ে পাক কালামে এরশাদ করছেন-

واعتصموا بحبل الله جميعا ولاتفرقوا

অর্থাৎ “তোমরা সংঘবদ্ধভাবে আল্লাহর রজ্জুকে আখঁড়ে ধর এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়োনা।” ( সূরা আল-ই-ইমরানঃ১০২)

অতঃপর আল্লাহ পাক প্রদত্ত ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রদর্শিত বিধান প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সংঘবদ্ধ বা সংগঠিত হওয়ার উপর বিশেষভাবে গুরুত্বারোপ করেছেন। হুযুর করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুধুমাত্র “হিলফুল ফুজুল” গঠন করেই সংগঠন প্রতিষ্ঠার আদর্শ স্থাপন করেননি; অধিকন্তু হাদীস শরীফের বিভিন্ন উদ্ধতি থেকে সংগঠন করার ব্যাপারে তাঁর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিদর্শনা সুষ্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়।

রাসুলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন-
من خرج من الجمل عة قيد بشر فقد خلع ربقة الام عن عنقه الا ان يتراجع
অর্থাৎ, ‘যে ব্যক্তি সংগঠন (সত্যদল) হতে এক বিঘতও বের হয়ে যায় সে ইসলামের রশি আপন গর্দান হতে নামিয়ে নেয়; যতক্ষণ না সে পুনরায় এসে যোগ দেবে।’ (মসনতে আহমদ, তিরমিজী)

তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আরো ঘোষণা করেন-

لا إسلام الا بالجما عة ولا جماعةالايبالا مارةولاامارةالا بالطاعة.

অর্থাৎ, ‘সংগঠন ছাড়া ইসলাম (পরিপূর্ণ পালন করা) হয় না, নেতৃত্ববিহীন সংগঠন চলে না, এবং আনুগত্য ব্যতিরেকে নেতৃত্ব (সফল) হয়না।’ আরো বলা হয়েছে-

من خرج من الطاعة وفراق الجامعة فمات ميتة جاهلية.

অর্থাৎ, ‘যে ব্যক্তি আনুগত্য বর্জন করে, এবং (হক) দল থেকে বিচ্ছিন্নাবস্থায় মৃত্যুবরণ করে, তার মৃত্যু হবে জাহেলিয়াতের মৃত্যু।’ (মুসলিম)

কোরআন ও হাদীসের উপরোক্ত উদ্ধৃতি সুন্নীয়ত প্রতিষ্ঠায় সংগঠনের গুরুত্বকে দিনের আলোর মতে উজ্জ্বল করে দিয়েছে। আজ বাতিল শক্তি যেভাবে মজবুত আসন দখল করে নিয়েছে তা সম্ভব হয়েছে একমাত্র সংগঠনের মাধ্যমেই। পক্ষান্তরে সুন্নী মুসলমানদের অবস্থান দুর্বলতর হওয়ার পেছনে মূল কারণ খুঁজে পাওয়া যায় সংগঠন বিচ্ছিন্নতা। বাতিলের সাংগঠনিক শক্তির মোকাবেলায় সত্যিকার আদর্শের ধারক হয়েও আমরা আজ পশ্চাদপদ। এ কারণেই সত্যপথের যাত্রীদের হুযুর পুরনুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সংগঠনের গুরুত্ব সম্পর্কে দেড হাজার বছর আগেই ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন।