ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠার শতবর্ষ পূর্তিতে শুভকামনায় ছাত্রসেনা

দেশের শীর্ষস্থানীয় অন্যতম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠার শতবর্ষ পূর্ণ হয়েছে গতকাল। এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পেছনের বহু সুখকর ও অসুখকর তথ্য বিভিন্ন সময়ে ইন্টারনেটের মাধ্যমে আমরা জেনে থাকি। যার মধ্যে উভয় বাংলার জনপ্রিয় একজন কবির ঢাবি প্রতিষ্ঠায় বিরোধিতার ব্যাপারও শোনা যায় প্রতিনিয়ত। অথচ সে মানুষটিকে নিয়েই রীতিমতো এখানে চলে নানা ধ্যান-জ্ঞান, চর্চার আয়োজনের মহোৎসব।
মুদ্রার ঠিক অপরদিকে ঢাবি’র প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ের অন্যতম সহায়ক ভূমিকা পালনকারী মহাত্মন ধনবাড়ীর নবাব বাহাদুর সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী, খান বাহাদুর আহছানউল্লাহ (রহ.), হযরত কেবলা শাহ মুহাম্মদ আহসানুল্লাহ (রহ.), এবং বিশেষত শামসুল উলামা আবু নাছের মুহম্মদ ওয়াহেদ (রহ.)’র মত অনেক মুসলিম মনীষীর নাম যেন কেউই জানে না, বা জানতে চায় না! একটি স্পষ্ট বৈষম্য এই মহান মনীষীগণের প্রতি; যা প্রকারান্তে তাঁদের কৃত সহায়তাকেই অস্বীকার করে।
বরেণ্য গবেষক দেওয়ান নূরুল আনোয়ার হোসেন চৌধুরীর লিখিত ‘জালালাবাদের কথা’ বইয়ের ৩৯৭ পৃষ্ঠায় আবু নাছের মুহম্মদ ওয়াহেদ (রহ.) সম্পর্কে লিখতে গিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় মশুরীখোলার হজরত কেবলা শাহ মুহাম্মদ আহসানুল্লাহ (রহ.)’র পক্ষ থেকে ৩ হাজার টাকা অনুদান প্রদানের কথা তুলে ধরেন লেখক। সেই সময়ে একজন পিরের আধুনিক শিক্ষার প্রতি এ অনুরাগ সত্যিই অনন্য, এবং এ বঙ্গের মুসলিম প্রগতির জন্য কত বড় প্রেরণাদায়ক বিষয় ছিল, তা সহজেই অনুধাবন করা যায়।
ঢাকার নবাব স্যার খাজা সলিমুল্লাহ বাহাদুরের অবদান, ধনবাড়ীর নবাব বাহাদুর সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরীর অকাতরে দান-দক্ষিণা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিল অনুমোদনে খান বাহাদুর আহছানউল্লাহ (রহ.)’র বলিষ্ট ভূমিকা, অর্থ সংগ্রহ আর জনমত গঠনে শামসুল উলামা আবু নাছের মুহম্মদ ওয়াহেদ (রহ.)’র নিরলস প্রচেষ্টার কি কোনো মূল্যায়ণ হলো শত বর্ষে পা রাখা দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে? অকৃতজ্ঞার দায় শত বছরেও দগদগে ক্ষতর মতই রয়ে গেছে।
ঢাবিতে আবাসন সংকটের কথা আমরা সকলেই জানি। প্রশাসনের নিকট আমাদের অনুরোধ, এই মহান মনীষীগণের নামে প্রতিষ্ঠা করা হোক যথেষ্ট মানসম্মত হল। নবাব বাহাদুর সৈয়দ নবাব আলী চৌধুরীর নামে প্রতিষ্ঠিত সিনেট ভবনেই তাঁর অবদান সীমিত না রেখে তাঁকে নিয়ে আলাপ হোক; নতুন প্রজন্মকে তিনিসহ সহায়ক বাকি সকল মনীষীদেরই উপলক্ষ করে স্মরণের ব্যবস্থা করা হোক। ঢাবি কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে শায়িত জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের নামেও প্রতিষ্ঠা হোক একটি স্থাপনা। ইতিহাসকে ভুলে এগিয়ে যেতে পারে না কেউ। সুতরাং, আমরাও এগিয়ে যেতে পারি আমাদের স্বর্ণালি অতীতকে যথেষ্ট সম্মানের সহিত স্মরণের মাধ্যমে। আসুন, নিজেদের অতীতকে যথাযথ মর্যাদায় সম্মান করি; কৃতজ্ঞতাবোধ জাগ্রত করি নিজেদের মনে। আমাদের নাম যেন ঠাঁই না পায় ওই অকৃতজ্ঞদের দলে, সে ব্যবস্থা আমরা গ্রহণ করি।
দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় এই বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রতি অগাধ শ্রদ্ধা ও শুভকামনা জানিয়ে পাশাপাশি এ শুভক্ষণটিকে উপলক্ষ করে বিশ্ববিদ্যালয়টিকে নিজেদের স্বর্ণালি অতীতে অবদান রাখা ব্যক্তিদের স্মরণ করার বিনীত আহবান জানাচ্ছি।
শুকামনা রইলো দেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অন্যতম ধারক ও বাহক ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়’।

Leave a Reply